Monday, October 26, 2020

আল-কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক

গিরিশ চন্দ্র সেন । তার জন্ম: ১৮৩৪ - মৃত্যু: ১৫ আগস্ট ১৯১০ । তিনি ছিলেন একজন বাঙালি ধর্মবেত্তা,অনুবাদক ও বহুভাষীক। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামেই তিনি বেশী পরিচিতি পেয়েছেন। বাংলা ভাষাভাষী জনসাধারনের নিকট প্রথম বাংলা ভাষায় পুর্নাঙ্গ কুরআন অনুবাদ ও প্রকাশের কৃতিত্ব তাকে দেয়া হয়। তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু এবং ইসলামী বিষয়াবলী সমন্ধেও পান্ডীত্য অর্জন করেছিলেন।

গিরিশ চন্দ্র সেনের জন্ম নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে। কর্মগত জীবনের শুরুর পর্যায়ে তিনি ময়মনসিংহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাচারিতে নকলনবিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে স্বল্প সময়ের জন্য ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি ঢাকা প্রকাশে কাজ করেন এবং এতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। পরে তিনি সুলভ সমাচার ও বঙ্গবন্ধু পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক এবং মাসিক মহিলা (১৩০২) পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি ফারসি ও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করেন। কেশবচন্দ্র সেন ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর প্রভাবে ১৮৭১ সালে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন এবং প্রচারব্রত গ্রহণ করে উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত ও ব্রহ্মদেশ ভ্রমণ করেন। গুরু কেশবচন্দ্র সেনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তিনি ইসলামি সাহিত্য-সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। এ উপলক্ষে আরবি ভাষা ও ইসলামিক ধর্মশাস্ত্র চর্চার জন্য তিনি ১৮৭৬ সালে লক্ষ্ণৌ গমন করেন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে কুরআনের বঙ্গানুবাদ (১৮৮১-৮৬) সম্পন্ন করেন। বাংলা সাহিত্যে এটা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ, চারিত্রিক উদারতা এবং সত্যবাদিতার জন্য গিরিশচন্দ্র ব্রাহ্ম-হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। এক কথায় তিনি ছিলেন সর্বধর্মসমন্বয়ের প্রতীক। তাই সকলের নিকট তিনি ‘ভাই গিরিশচন্দ্র’ নামে পরিচিত ছিলেন।

ব্রাক্ষধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে কেশবচন্দ্রের অনুরোধ ও ব্যবস্থাপনাতে তিনি ফার্সি ভাষায় আরো গভীর জ্ঞান লাভ এবং আরবি-ফার্সি সাহিত্যের ওপর পড়াশোনা করার জন্য কানপুর ও লখনউ গমন করেন। ফিরে আসার পর কেশবচন্দ্রের উৎসাহেই তিনি ইসলামি দর্শনের উপর গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য প্রধান বাধাই ছিল ভাষা। ব্রাহ্মসমাজের প্রচারের উদ্দেশ্যে কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত নববিধান সভা ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে গিরিশচন্দ্র সেন সরাসরি আরবী থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ বাংলা অনুবাদ করেননি। বরং আরবীর পাশাপাশি ফার্সী অনুবাদেরও সাহায্য নিয়ে ছিলেন। আর তিনি আল্লাহ পাক এর নামের জায়গায় স্রষ্টা/ঈশ্বর এবং নবী ও রাসুল এর স্থানে পয়গম্বর/অবতার/দেবদূত ফেরেশতাদের স্থলে দেব-দেবী ইত্যাদি ব্যবহার করে ছিলেন।

কোরানশরিফ অনুবাদ করতে আরবী ব্যাকরণের সঠিক ব্যাবহার এবং কোরান শরিফের বিশেষ জ্ঞান থাকা আবশ্যিক ছিল তাই তৎকালীন দুটি মুসলিম সম্প্রদায় এটির প্রশংসা করলেও গিরিশ চন্দ্র সেনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম যেটা তখন বাজারে প্রচলিত ছিলো তাও ছিলো নানা দোষে দুষ্ট, তাই সকলের নিকট তা অনুবাদ গ্রহণযোগ্য হয়নি ।

 

No comments:

Post a Comment

জ্ঞান সম্পর্কিত কিছু উক্তি

 চিন্তাশক্তি হচ্ছে জ্ঞানের অন্বেষক । উৎকৃষ্ট সম্পদ হলো জ্ঞান । কিছু করার পূর্বে একাধিক ভাবা জ্ঞানী ব্যক্তির বিশেষণ। জ্ঞানী ব্যক্তির শক্তি হচ...